উবুন্টু পরিচিতি

উবুন্টু হচ্ছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের একটি সংস্করণ। একটি অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে সেই সফটওয়্যার যা "আপনার কম্পিউটারকে চালায়"। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম, অন্তত ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে, কিন্তু লিনাক্স হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা একটি পদক্ষেপ।

ঘটনার সূত্রপাত হয় সেই ১৯৮০ সালে, যখন একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান কম্পিউটার বিজ্ঞানী রিচার্ড স্টলম্যান একটি প্রাচীন অপারেটিং সিস্টেম ইউনিক্স এর ক্লোন করতে চেয়েছিলেন। সেই সময়ে, ইউনিক্স পৃথিবীর অনেক অনেক ইন্ড্রাস্ট্রয়াল এবং একাডেমিক কম্পিউটার সিস্টেম পরিচালনা করছিল।

স্টলম্যান এই কাজটি করেছিলেন কারণ ইউনিক্স ধীরে ধীরে ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন হয়ে যাচ্ছিল – এটি তখন তার সোর্স কোড (প্রোগ্রামিং সংকেত) শেয়ার করা বন্ধ করে দিল, যা ইউনিক্সের জন্মলগ্ন ১৯৬৯ সাল থেকে শেয়ার করে আসছিল।

স্টলম্যানের কাছে এটি ছিল একটি অভিশাপের মত, যিনি বিশ্বাস করতে সফটওয়্যার শেয়ার করা হচ্ছে স্বভাবসূলভ এবং মঙ্গলজনক। তিনি স্বীদ্ধান্ত নিলেন তার উদ্ভাবন করা ইউনিক্সের সংস্করণটি সব সময় বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, এবং এই লক্ষ্যে উদ্ভাবণ করলেন মুক্ত সফটওয়্যার এর আইনসম্মত এবং নৈতিক ধারণা। সহজ কথায় মুক্ত সফটওয়্যার বলতে বোঝায়, সফটওয়্যার বিতরণ করার ক্ষেত্রে ব্যাবহারকারীদের সর্বদা স্বাধীনতা থাকবে, কোন বাধা ছাড়া। প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হলে, মুক্ত সফটওয়্যার তার সোর্সকোড দেখা এবং সাথে সাথে তা পরিবর্তণ করার পূর্ণ অধিকার প্রদান করে, এমনকি এই সোর্সকোডকে নির্ভর করে আরেকটি নতুন প্রোগ্রাম তৈরি করা যাবে। যদিও, যেকোন ধরনের পরিবর্তন করার পর নতুন প্রোগ্রামকেও একটি মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে প্রকাশ করতে হবে, যাতে অন্যরা তা থেকে পর্যায়ক্রমে সুফল লাভ করতে পারে।

মুক্ত সফটওয়্যার আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিটি মুক্ত সফটওয়্যার প্রজেক্টে একটি সফটওয়্যার লাইসেন্স প্রয়োগ করা হয়। এটিকে বলা হয় GNU Public License বা GPL. এটি অনেকটা মাইক্রোসফটের End User License Agreement বা EULA এর মত যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে আসে (এবং উইন্ডোজে যে কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করার সময় এটি উল্লেখ থাকে)। এক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে, মাইক্রোসফট EULA যেকোন পরিস্থিতিতে এটি শেয়ার করতে বাধা প্রদান করে, অন্যদিকে GPL এর বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী - আপনি সবসময় সফটওয়্যারটি শেয়ার করতে পারবেন।

স্টলম্যান তার ইউনিক্সের সংস্করণটির নাম দিলেন "GNU” (উচ্চারণ করা হয় জি-নু)। নামটি কয়েকটি শব্দের প্রথম অক্ষরকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন পদ্ধতিতে গঠন করা হয়েছে, যার মানে দ্বারায় GNU Not Unix (GNU ইউনিক্স নয়)। অন্যকথায়, এই ধরনের শব্দগঠন নিজে নিজেকেই নির্দেশ করে - এই ধরনের নামকরণ প্রোগ্রামারদের প্রিয় একটি কৌতুক।


লিনাক্স কার্নেল:
জি-নু অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা ধীরে ধীরে একটি বিশাল প্রজেক্টে পরিণত হচ্ছিল। এটি যদিও যথেষ্ঠ ভাল অপারেটিং সিস্টেম ছিল, কিন্তু এর ভাল কোন কার্নেল ছিল না। কার্নেল হচ্ছে যে কোন অপারেটিং সিস্টেমের মূল অংশ যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে, যেমন হার্ডওয়ারের সাথে সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপনের কাজ।

সেইসময় অনেকটা কাকতালীয়ভাবে লিনাস টোরভাল্ডস নামক একজন প্রোগ্রামার সমাধান প্রদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি কার্নেল তৈরির একটি ব্যক্তিগত প্রজেক্ট শুরু করেন। নামকরণ সংক্রান্ত ভুলের কারণে তিনি যখন এই কার্নেলটি ইন্টারনেটে আপলোড করেন তখন এটি পরিচিতি পায় লিনাক্স নামে - এটি “লিনাস" ও "ইউনিক্স" শব্দের মিশ্রণে গঠিত।

পরীক্ষামূলকভাবে, টোরভাল্ডস তার কার্নেলকে মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে প্রকাশ করলেন এবং আগ্রহীদেরকে তাকে সাহায্য করতে আহ্বান করলেন। তারা এগিয়ে এল। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ এই কাজে যুক্ত হতে লাগল। বছরখানেক পরে, প্রজেক্টি ক্রমাগতভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ডিজাইন ও আউটলুক চমৎকার হয়ে উঠল। বর্তমানে, লিনাক্স কার্নেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাচ্ছে, যার মধ্যে আছে IBM এর মত প্রতিষ্ঠান।

যেহেতু কার্নেল একটি অপারেটিং সিস্টেমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, লোকজন আস্তে আস্তে জি-নু এবং লিনাক্সের সমন্বয়কে কেবলমাত্র লিনাক্স নামে ডাকা শুরু করল। এটি স্টলম্যানকে মর্মাহত করল, যিনি প্রস্তাব করেছিলেন এই সমন্বয়কে একত্রে জি-নু/লিনাক্স নামে ডাকতে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে, লিনাক্স নামটাই চিরস্থায়ী হয়ে গেল।

নানা ধরনের উৎস থেকে আসা সফটওয়্যারগুলোকে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত করা হয়। লিনাক্সে অন্তর্ভূক্ত সকল সফটওয়্যারগুলোও প্রত্যেকটি মুক্ত সফটওয়্যার, এমনকি এদের বেশিরভাগের সাথে জি-নু বা রিচার্ড স্টলম্যানের কোন সম্পর্ক নেই। পৃথিবীকে দেয়া রিচার্ড স্টলম্যানের সবচেয়ে বড় উপহার কিন্তু জি-নু নয়, বড়ং তা হচ্ছে মুক্ত সফটওয়্যারের ধারণা। বর্তমানে স্টলম্যান পৃথিবীজুড়ে মুক্ত সফটওয়্যার প্রচারের কাজে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন।


লিনাক্সের সংস্করণ:
লিনাক্সের কেবলমাত্র একটি সংস্করণ নয়, রয়েছে শত শত সংস্করণ। সংস্করণগুলোকে বলা হয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা সংক্ষেপে ডিস্ট্রো। উদাহরণস্বরূপ অন্যান্য সংস্করণের মধ্যে রয়েছে রেডহেট (www.redhat.com), সুসি (www.suse.com) ইত্যাদি এবং সবসময় নতুন আরেকটি সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে।

এই বৈচিত্র্য সম্ভব হয়েছে মুক্ত সফটওয়্যারের স্বাধীনতার কারণে - যে কেউ লিনাক্সের একটি সোর্স কোড নিয়ে, তাতে পরিবর্তন করে নিজের একটি সংস্করণ তৈরি করতে পারে।

কোন কোন সংস্করণকে বাণিজ্যিকভাবে অর্থায়ন করা হয়, বাকীগুলো গঠিত হয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লিনাক্স ব্যবহারকারীদের বিশাল কমিউনিটির সুসংঘটিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। উবুন্টু গঠিত হয়েছে এই দুটি মাধ্যম দ্বারাই – এটিকে অর্থায়ন করছে ক্যানোনিকাল নামক দক্ষিণ আফ্রিকান একটি প্রতিষ্ঠান, যার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাটলওর্থ এটি গঠন করেছেন ২০০৪ সালে। কিন্তু উবুন্তু বিশাল কমিউটিটির স্বেচ্ছাশ্রমের সুবিধাও গ্রহণ করে থাকে। উবুন্টু গঠিত হয়েছে ডেবিয়ান (www.debian.org) নামক আরেকটি কমিউনিটি নির্ভর লিনাক্সের উপর ভিত্তি করে।


উবুন্টু কেন সবার চেয়ে আলাদা:
তিনটি কারণে উবুন্টু লিনাক্সের শত শত সংস্করণের মধ্যে আলাদাভাবে দাড়িয়ে আছে -
১. এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ডেস্কটপ ব্যবহারকারী
২. উবুন্টুর দর্শন ও বিশাল কমিউনিটি
৩. ব্যবহার করা খুবই সহজ

ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যে:
যদিও সকল ধরনের কম্পিউটারের জন্য উবুন্টুর আলাদা সংস্করণ রয়েছে, তথাপি এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ডেস্কটপ ব্যবহারকারী। অন্যান্য বেশিরভাগ লিনাক্সের সংস্করণগুলোকে একই সাথে ঘরে ডেস্কটপ কম্পিউটারে এবং অফিসে সার্ভার কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু সেগুলো ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ততটা মসৃণ নয়। অধিকন্তু অনেক ক্ষেত্রে ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের ততটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। অন্যদিকে ডেস্কটপে ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে উপভোগ্য করার জন্য উবুন্টু ডেভেলপাররা খুবই মনযোগ দিয়ে থাকে।

২০০৪ সালে উবুন্টু যখন প্রথম তৈরি করা হয়, মার্ক সাটলওর্থ অনলাইন ডাটাবেইজে উবুন্টুর একটি বাগ (Bug) বা সমস্যা যোগ করেন। যদিও এটি কোন সফটওয়্যারের বাগ ছিল না, বরং এটি ছিল উবুন্টুকে উন্নত করার যুগান্তকারী আহ্বান। বাগটিতে বলা ছিল: “মাইক্রোসফটের ডেস্কটপ কম্পিউটারের বাজারে রয়েছে অধিকাংশ শেয়ার। এটি একটি বাগ, উবুন্টুকে ডিজাইন করা হয়েছে একে সমাধান করতে”।


উবুন্টুর দর্শন – আফ্রিকান গুরুত্ব:
আপনারা হয়ত এর মধ্যে উপলব্ধি করছেন যে, লিনাক্স যতটা না অপারেটিং সিস্টেম তার চাইতে বেশি হচ্ছে একটি দর্শন। উবুন্টুও এর ব্যতিক্রম নয়।

উবুন্টু শব্দটি এসেছে একটি আফ্রিকান ধারণা থেকে যার অর্থ অনুবাদ করলে দাড়ায় অনেকটা এরকম "অন্যের জন্য মনুষ্যত্ব"। জাতিগত বিভক্তি পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় শব্দটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে, যেখানে এটি নির্দেশ করে নিজস্ব গোষ্ঠির জন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অবদান। ২০০৪ সালে মার্ক সাটলওর্থ যথন উবুন্টু প্রজেক্ট শুরু করেন, তিনি এই দার্শনিক মতবাদকে ফ্রি সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করে সবার সামনে তুলে ধরেন।

মোট কথা হচ্ছে, সফটওয়্যার হওয়া উচিত সর্বব্যাপী - এই ধারণার উপর উবুন্টু প্রজেক্ট পরিচালিত হয়। এটি হবে যে কারো জন্য এবং যে কোন স্থানে ব্যবহার, শেয়ার বা পরিবর্তনযোগ্য। এর মানে হচ্ছে সফটওয়্যার হবে প্রত্যেকটি ব্যবহারকারীরে নিজস্ব ভাষায়। যদি কেউ হয় ব্যবহারে অক্ষম, সফটওয়্যার হবে তার জন্যও ব্যবহারযোগ্য।

প্রায় সকল লিনাক্সের সংস্করণের মত, উবুন্টুও বিনামূল্যে পাওয়া যায়। রিলিজের একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর্যন্ত এর আপডেটগুলোও বিনামূল্যে পাওয়া যায় (সাধারণত ১৮ মাস পর্যন্ত)।

যে বিষয়টি উবুন্টু উপস্থাপন করে তা হচ্ছে স্বাধীনতা, ব্যবহার এবং শেয়ারের স্বাধীনতা, এটি দিয়ে যে কোন কিছু করার স্বাধীনতা এবং শেখার স্বাধীনতা।


উবুন্টুর কমিউনিটি:
উবুন্টুর কমিউনিটির উৎপত্তি হয়েছে সরাসরি এর দর্শন থেকে। সহজ কথায় বললে, উবুন্টুর নীতিকে মানুষ শ্রদ্ধা করেছে। তারা এটাও পছন্দ করেছে যে, উবুন্টু ডেস্কটপ ব্যবহারকে লক্ষ্য করে তৈরি।

উবুন্টুর মত লিনাক্সের অসংখ্য সংস্করণ রয়েছে যা ডেস্কটপ ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সবগুলোই বিফল হয়েছে। তার কারণ হচ্ছে সেগুলো মুক্ত সফটওয়্যার নীতির কোন একটি অংশের সাথে আপোস করেছিল। হয়ত এদের সাথে একটি স্বত্ত্বাধীকারি প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকত যা স্বাধীনভাবে বিতরণ বা পরিবর্তন করা যেত না। অনেক ক্ষেত্রে এই সব লিনাক্স পুনরায় বিতরণে সীমাবদ্ধতা থাকত।

উবুন্টু এর কোনটাই করে নি। বিনিময়ে উবুন্টু পেয়েছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ব্যবহারকারীদের একটি সত্যিকারের বিশাল কমিউনিটি - অনেকক্ষেত্রে বলা হয় লিনাক্সের যেকোন ভার্শন থেকে উবুন্টুর রয়েছে সর্ববৃহৎ কমিউনিটি। এটি অবশ্যই সবচেয়ে বন্ধুসুলভ একটি লিনাক্স কমিউনিটি।

সাটলওর্থ পেছনের আসন গ্রহণ করলেন, মাঝেমধ্যে দুএকটা নির্দেশনা বাদে, কমিউনিটিই এর পরিচালনার দ্বায়িত্ব নিল। নতুন কোন ফিচার যোগ করার স্বীদ্ধান্তটা গণতান্ত্রিকভাবে নেয়া হয় এবং এর অসংখ্য দক্ষ ব্যবহারকারী উবুন্টু ডেভেলপ করতে সাহায্য করে থাকে।

উবুন্টু কমিউনিটির সুবিধা এবং বিশাল টেকনিকাল সাপোর্ট পাওয়া যায় এর অনলাইন ফোরাম থেকে - www.ubuntuforums.org, যেখানে উবুন্টু ব্যবহারকারীরা প্রবেশ করে এবং একজন আরেকজনকে সাহায্য করে।


উবুন্টুর সহজবোধ্য ব্যবহার:
উবুন্টুর শক্ত নীতি এবং অর্থনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি, সাটলওর্থ লিনাক্সের পার্টিতে আরেকটি বিষয় নিয়ে এলেন: তিনি চেয়েছিলেন "মানুষের জন্য লিনাক্স” তৈরি করতে। বাস্তবিক পক্ষে এটিই হচ্ছে উবুন্টুর মূল স্লোগান।

একটা সময় ছিল যখন লিনাক্স শুধুমাত্র দক্ষ ব্যবহারকারীরাই ব্যবহার করত। এটিকে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে গণ্য করা হত এবং এটি শেখা ছিল অত্যধিক দুরহ কাজ, যা বেশিরভাগকেই দূরে সরিয়ে দিত।

উবুন্টু এর সবকিছুই পরিবর্তন করেছে। এটি ডেস্কটপ ব্যবহারকারীকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে এবং তাদের সামনে গ্রাফিক্যাল কনফিগারেশন সফটওয়্যার উপস্থাপন করেছে। এর সাথে রয়েছে অসংখ্য ধরনের হার্ডওয়্যার ড্রাইভার, ফলে প্রায় সকল স্ট্যান্ডার্ড হার্ডওয়্যার "সাথে সাথে কাজ করে"। উবুন্টু নিয়ে এসেছে একটি ইন্সটলার প্রোগ্রাম যা দিয়ে পুরো সিস্টেমকে কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে আপডেট করা যায়।

যদিও এর সাথে কমান্ডলাইনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু উবুন্টু ব্যবহার করতে এটি জরুরী নয়। কমান্ডলাইনের মাধ্যমে প্রায় সময় দ্রুত ও দক্ষতার সাথে কাজ করা যায়, তবে এটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়। উবুন্টু সত্যিকার অর্থে লিনাক্সকে সবার কাছে ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে।

এটি মনে করার কোন কারণ নেই যে উবুন্টু মূল লিনাক্স থেকে দূরে সরে গেছে। আসলে উবুন্টুর বহিরাবরণের নিচে পাওয়া যাবে, উবুন্টু হচ্ছে অসংখ্য ব্যবহারকারীর কাছে শ্রদ্ধাভাজন লিনাক্সের একটি কমিউনিটি নির্ভর সংস্করণ ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।


উবুন্টু কি কি সুবিধা প্রদান করে:
উবুন্টু হচ্ছে সম্পূর্ণ আধুনিক একটি অপারেটিং সিস্টেম, যাতে উইন্ডোজ বা ম্যাকিন্টোশ ওএস এক্স এ যা পাওয়া যায় তার সবকিছুই রয়েছে, কিন্তু তাদের অসুবিধাগুলো ছাড়া। এটি সবকিছুকে সহজভাবে উপস্থাপন করে, তথাপি আধুনিকতম ফিচার প্রদান করে।

ওয়েব ব্রাউজিং এর জন্য রয়েছে মজিলা ফায়ারফক্স। এটি সেই ফায়ারফক্স যা উইন্ডোজে ব্যবহার করা যায় এবং যাতে একই এড-অনগুলো কাজ করে। বন্ধুবান্ধবদের সাথে ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং এর জন্য রয়েছে Pidgin যা ইয়াহু, জিমেইল, এআইএম, এমএসএন এর মত প্রায় সকল সার্ভার সাপোর্ট করে। লেখালেখি করা, স্প্রেডশীট, প্রেজেন্টেশনের জন্য রয়েছে OpenOffice.org নামক সফটওয়্যার, যা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড থেকে কোন অংশে কম নয়। ছবি সম্পাদনার জন্য রয়েছে GIMP, যেখানে মিউজিক চালানোর জন্য রয়েছে RhythmBox এবং ভিডিও দেখানোর জন্য রয়েছে Totem। এই সকল প্রোগ্রামগুলো উবুন্টুর সাধারণ ইন্সটলেশনের সাথেই বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

উবুন্টুর হার্ডওয়্যার সাপোর্ট খুবই চমৎকার। প্রাত্যহিক জীবনের সকল হার্ডওয়্যার এটি সাপোর্ট করে - সাউন্ডকার্ড, গ্রাফিক্সকার্ড, প্রিন্টার, ওয়ারলেস, USB মেমরী ডিভাইস, ক্যামেরা, আইপড এবং আরো অসংখ্য। উবুন্টুতে এগুলো ব্যবহার করতে হার্ডওয়্যারের ড্রাইভার সিডি সাথে নিয়ে ঘোরার কোন প্রয়োজন নেই – প্র্যাক্টিক্যালি উবুন্টু ইন্সটল করার পর এই ডিভাইসগুলো সরাসরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠে।

উবুন্টু পুরাতন হার্ডওয়ারেও ভাল কাজ করে। উবুন্টু চালাতে সর্বনিম্ন এবং বাস্তবসম্মত রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে - উবুন্টু ৮.০৪ এর জন্য ৭০০ মেগাহার্জ প্রসেসর, ৩৮৪ মেগাবাইট মেমোরী এবং ৮ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক জায়গা।

(Ubuntu Pocket Guide এর ভূমিকা অনুবাদিত)

2 মন্তব্য(গুলি):

Priyo Bangla বলেছেন...

amar khub valo laglo... kintu bangla word likhte parchina keno... hoyto kono mistake korchi,tai. tobu besh laglo.

kamalesh chakraborty বলেছেন...

অসাধারণ লেখা- অনবদ্য বিষয়টিকে সুন্দর ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করেছেন। ধণ্যবাদ।